বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক বৈঠকের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এবং তিমুর-লেস্তের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক বৈঠকের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এবং তিমুর-লেস্তের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চার দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। এরপর এ দুই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেন, তার সরকার গণতন্ত্রে উত্তরণে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা তাকে অবহিত করলে তিনি বলেন, আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে, আমরা আপনাকে সমর্থন করব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির সুবিধার্থে তিনি একটি ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর, রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই ও আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের গণতান্ত্রিক চেতনাকে সমুন্নত রাখবে এমন একটি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে।
দুই নেতা জুলাই অভ্যুত্থানের কারণ, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা জার্মান চ্যান্সেলরকে ব্যাখ্যা করেছিলেন কীভাবে তরুণরা জুলাই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে চলা দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে।
১২ বছরের কম বয়সি একজন ছাত্র অভ্যুত্থানে যোগদানের আগে তার মায়ের কাছে একটি চিঠি লিখেছিল এবং শাহাদাত বরণ করেছে বলে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর ব্যবসায়িক সংযোগের আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ অন্বেষণের জন্য জার্মান ব্যবসায়ীদের একটি দলকে ঢাকায় পাঠানোর আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে আরো জার্মান বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, আমরা আপনার কারখানা হতে পারি। বাংলাদেশ এখনো সার্কের ধারণা পোষণ করে এবং প্ল্যাটফরমটিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
তিনি জার্মান চ্যান্সেলরকেও ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কীভাবে নেপাল থেকে পানিবিদ্যুৎ শক্তি দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশকে উপকৃত করতে পারে, তাদের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে।
তিনি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরিতে স্কোলজের সহায়তাও চেয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে দেশটির জুরিখ বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টা ডাভোসের উদ্দেশে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে সোমবার রাত ১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সফরে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ এবং থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েংটার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে শেখা লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড, মেটাতে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল ড. অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালার সঙ্গেও বৈঠক করবেন ড. ইউনূস। আগামী ২৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
Comments 0